১.২ যুক্তিবিদ্যার ধারণা
Concept of Logic
যুক্তিবিদ্যার ইংরেজি শব্দ 'Logic' শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে গ্রিক ভাষা থেকে। গ্রিক ভাষার 'Logos' শব্দের সাথে ইংরেজি শব্দ 'Logic'-এর মিল রয়েছে। 'Logos' শব্দের অর্থ ভাষা বা চিন্তা। উৎপত্তিগত অর্থের দিক থেকে যুক্তিবিদ্যাকে বলা হয় ভাষায় প্রকাশিত চিন্তা সম্পর্কিত বিজ্ঞান। অর্থাৎ যুক্তি বা তর্ক বা তর্কবিদ্যা বা যুক্তিশাস্ত্র বা যুক্তিবিজ্ঞান বা যুক্তিবিদ্যা হলো ‘ভাষায় ব্যক্ত চিন্তা সম্পৰ্কীয় বিজ্ঞান। যুক্তিবিদ্যা ভাষায় প্রকাশিত চিন্তা সম্পর্কে সুসংহত ও যুক্তিসম্মত আলোচনা করে। প্রত্যক্ষের সীমা ছাড়িয়ে বৃহত্তর বিষয় বা বস্তুর জ্ঞানলাভ করাই হলো মানুষের লক্ষ্য। যে কোনো সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টায় বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের হাতিয়ার বিচারমূলক চিন্তা। চিন্তা হলো জ্ঞানের উপায়। এরূপ চিন্তাই হলো যুক্তিবিদ্যার আলোচ্য বিষয়। আমরা সর্বদা জ্ঞানলাভের জন্য চিন্তা করি। সে চিন্তা বিশৃঙ্খল হলে আমাদের জ্ঞানলাভ সম্ভব হয় না। চিন্তাকে সুশৃঙ্খল নিয়মানুগ হতে হয়। বিভিন্ন নিয়ম-কানুন তাকে মেনে চলতে হয়। এ সুশৃঙ্খল চিন্তা এবং তার প্রকাশকেই বলা হয় যুক্তিসঙ্গত বা যৌক্তিক চিন্তা (Reasoning)। কাজেই যুক্তিবিদ্যার প্রধান বিষয়বস্তু হচ্ছে যৌক্তিক চিন্তা এবং ভাষায় তার প্রকাশ। সংক্ষেপে বলা যায়, ‘যুক্তিবিদ্যা হচ্ছে যুক্তির বিজ্ঞান'। যুক্তির দ্বারাই আমরা জ্ঞানলাভ করি। এজন্য যুক্তি প্রক্রিয়া ও যুক্তি কৌশলকে হতে হয় ধারালো, শানিত, তীক্ষ্ণ ও সুনিপুণ। নতুন জ্ঞানলাভের জন্য আমরা জানা সত্য থেকে অজানা সত্যে গমনের প্রক্রিয়াকে নির্বাচন করি।
যুক্তিবিদ্যা প্রথম পত্র
উদাহরণস্বরূপ, আমরা বলতে পারি একটি শিশুর জন্ম হয়েছে। এটি আমার জানা সত্য। এ জানা সত্য থেকে আমি সিদ্ধান
যার জন্ম হয় তার মৃত্যু ঘটে।
শিশুটির জন্ম হয়েছে।
অতএব, শিশুটির একদিন মৃত্যু ঘটবে।
জানা থেকে অজানার এরূপ অনুমান আমরা প্রতিনিয়ত করে থাকি। তবে সবসময় আমরা এমন করে যুক্তির প্রতিটি স্তর বা পর্যায়কে প্রকাশ করি না। তবু স্তরগুলো অপ্রকাশিত অবস্থায় প্রত্যেক দৃষ্টান্তের মধ্যে নিহিত থাকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি দেখি বাড়ির উঠোন ভিজা, তখন অনুমান করি রাত্রিবেলা বৃষ্টি হয়েছিল; দূরে কোথাও যদি ধোয়া দেখতে পাই, তাহলে অনুমান করি সেখানে নিশ্চয়ই আগুন লেগেছে। এ সকল যুক্তির সবই হলো জানা সত্য থেকে অজানা সত্যে গমনের প্রক্রিয়া। সব সময় আমাদের অনুমান বাস্তবক্ষেত্রে সত্য নাও হতে পারে। মেঘ দেখে আমি অনুমান করলাম বৃষ্টি হবে, কিন্তু বৃষ্টি নাও হতে পারে। কাজেই অনুমান সত্য এবং মিথ্যা দুই-ই হতে পারে। তবে অনুমানটি যদি যুক্তিসঙ্গত হয়, যুক্তিবিদ্যার কোনো নিয়মকে লঙ্ঘন না করে তাহলে অনুমানটি বাস্তবক্ষেত্রে মিথ্যা হলেও যুক্তির রাজ্যে অনুমানটি সত্য বা সঠিক। এজন্য বলা হয়, যুক্তিবিদ্যা হলো অনুমান সম্পৰ্কীয় বিজ্ঞান'।
যুক্তিবিদ্যা যুক্তি চিন্তনের একটি মৌলিক বিষয়। যুক্তি চিন্তনের মাধ্যমে মানুষের ভাবের আদান-প্রদান করে যুক্তিবিদ্যা। এটি একটি আদর্শনিষ্ঠ ব্যাবহারিক বিজ্ঞান যেখানে ভ্রান্তিকে পরিহার করে সত্যকে অর্জন করার উদ্দেশ্যে অনুমান করা হয়। যুক্তিবিদ্যা হচ্ছে বৈধ যুক্তি থেকে অবৈধ যুক্তির পার্থক্য নির্দেশ করার জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতি ও নীতিসমূহের একটি বিশিষ্ট বিদ্যা। এটি চিন্তার ব্যাবহারিক দিক নিয়ে আলোচনা করে। যুক্তিবিদ্যা চিন্তা পদ্ধতির ফলিত কলা এবং চিন্তার আকারগত নিয়মাবলির বিজ্ঞান। যুক্তিবিদ্যা হলো একটি মানসিক প্রক্রিয়ার অনুমান সম্পর্কীয় বিজ্ঞান, যার মাধ্যমে আমরা জানা সত্য। থেকে অজানা সত্যে উপনীত হতে পারি এবং নির্ভুলভাবে যুক্তির বৈধতা নির্ণয়ের কৌশল নিরূপণ করতে পারি। অনেকের ধারণা যুক্তিবিদ্যা যুক্তির বিদ্যা বা যুক্তি সম্পর্কীয় বিদ্যা। যে বিদ্যা পাঠ করলে যুক্তি সম্পর্কীয় জ্ঞান অর্জন করা যায়, তাকে যুক্তিবিদ্যা বলে। যুক্তিবিদ্যা আমাদের যুক্তি প্রণয়ন করতে শেখায় না এবং যুক্তিবিদ্যা পাঠ না করেও সঠিকভাবে যুক্তি উপস্থাপন করা যায়। মূলত যুক্তিবিদ্যা ভালো যুক্তি ও মন্দ যুক্তি, শুদ্ধ যুক্তি ও অশুদ্ধ যুক্তি, বৈধ যুক্তি ও অবৈধ যুক্তির মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করে থাকে। আবার যুক্তিবিদ্যা মানুষকে যুক্তি প্রদান করতেও শেখায় না, এটি যুক্তিপদ্ধতির নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জ্ঞান দান করে। তবে যুক্তিবিদ্যা পাঠ না করে যুক্তি উপস্থাপন করলে যুক্তির ত্রুটি ধরা যায় না এবং যুক্তির উৎপত্তি কোথা থেকে তা জানা সম্ভবপর হয় না। যুক্তিবিদ্যা মানুষের স্বাভাবিক যুক্তির ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। যুক্তিবিদ্যা মানুষকে অনুমানের নিয়মাবলিকে সঠিকভাবে অনুসরণ করতে শেখায়। যার ফলে মানুষের যুক্তি প্রদর্শনের ক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং মানুষ অন্যের যুক্তির ভুল-ভ্রান্তি খন্ডন করে নির্ভুলভাবে নিজের যুক্তিকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। যুক্তিবিদ্যা মানুষের মন থেকে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার দূর করে। একজন মানুষের ভাবাবেগ ও উচ্ছ্বাসকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং যথাযথ বিচার- বিশ্লেষণ দ্বারা সত্য জ্ঞানকে অনুসন্ধান করতে সাহায্য করে। এটি মানুষ তার মনকে যুক্তি ও নিয়ম-কানুন দ্বারা শাসন করে এবং যুক্তি চর্চা করে মনকে উন্নততর করে তোলে। এতে করে মানুষের মানসিক নিয়মানুবর্তিতা বৃদ্ধি পায় এবং দৈনন্দিন জীবনে চলার পথ সুগম হয়। শারীরিক ব্যায়াম যেমন মানুষের দেহকে সুস্থ ও সবল করে তোলে, তেমনি, যুক্তিবিদ্যার অনুশীলন ও চর্চা মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিকে শক্তিশালী ও সবল করে। যুক্তিবিদ্যা মানুষের ধী-শক্তি ও মেধাশক্তি প্রখর করে। ফলে মানুষ যে কোনো কঠিন ও জটিল সমস্যার সমাধান খুঁজে পায়। যুক্তিবিদ্যা অনুশীলনের কারণে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি ও চিত্ত উন্নত হয় এবং মানসিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পায়। ফলে মানুষ বস্তু বিষয়ের পাশাপাশি বস্তুনিরপেক্ষ বিষয় যেমন- আল্লাহ, আত্মা, আত্মার অমরত্ব, দেশ, কাল ইত্যাদি সম্পর্কে চিন্তা করতে সমর্থ হয়। যুক্তিবিদ্যা জ্ঞানের মৌলিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। বিশুদ্ধ ও পত্য জ্ঞান লাভের জন্য যুক্তিবিদ্যা যুক্তির মৌলিক নিয়মাবলিকে প্রয়োগ করে এবং বিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয়কে উপযোগী করে তোলে। যুক্তিবিদ্যার মাধ্যমে মানুষ যুক্তির বিশেষ কিছু কলাকৌশল আয়ত্ত করতে সমর্থ হয়। অন্যের যুক্তিকে খণ্ডন করে নিজের যুক্তিকে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে যুক্তিবিদ্যার গুরুত্ব অনেক বেশি। যুক্তিবিদ্যায় পারদর্শী একজন লোক। যুক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে অতি সহজেই অন্যকে আকৃষ্ট করে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারে। যুক্তিবিদ্যা মানুষকে সঠিক নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জ্ঞানদান করে। এতে করে মানুষ তার বাস্তব জীবনে যুক্তির ভুল-ত্রুটি খুঁজে বের করে ত্রুটিপূর্ণ যুক্তিকে পরিহার করতে শেখে এবং বাস্তবতার সাথে খাপ খাইয়ে চলতে পারে। কাজেই দৈনন্দিন জীবনে যুক্তিবিদ্যা পাঠের যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে সংজ্ঞা, বিভাগ, শ্রেণিকরণ, ব্যাখ্যা অত্যন্ত অপরিহার্য বিষয়। যুক্তিবিদ্যা এগুলো সম্পর্কে মানুষকে বিস্তারিত ধারণা দেয়। এর ফলে মানুষের বিজ্ঞান চর্চার পথ সুগম হয়। যুক্তিবিদ কার্ডের রীড তাঁর "Logic' গ্রন্থে বলেছেন, "যুক্তিবিদ্যার রয়েছে প্রাচীন ও সম্মানজনক ঐতিহ্য। এর উপর ভিত্তি করে প্রাচীন, মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগে সংস্কারমুক্ত শিক্ষার জন্য দর্শনের জাল বোনা হয়েছে।” যুক্তিবিদ্যা মানুষের এক উত্তম সাহচর্য। এটি বিজ্ঞানী, দার্শনিক, ধর্মতত্ত্ববিদ, সাধারণ মানুষ সবার জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় ও অনস্বীকার্য।
যুক্তিবিদ্যা পরিচিতি
১.৩ বিভিন্ন যুক্তিবিদের প্রদত্ত ধারণা
Concept by Various Logician
যুক্তিবিদ্যার ইতিহাস আলোচনা করলে ‘যুক্তিবিদ্যা' সম্পর্কে বিভিন্ন যুক্তিবিদের চিন্তা-চেতনায় বিশ্লেষণে ও ব্যাখ্যায় বিভিন্ন রূপ পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে এরিস্টটল, জে. এস. মিল, যোসেফ এবং আই. এম. কপি প্রদত্ত ধারণা তুলনামূলক বেশি মৌলিক ও প্রণিধানযোগ্য।
এরিস্টটল প্রদত্ত ধারণা
এরিস্টটলের যুক্তিবিদ্যা বিষয়ক গ্রন্থাবলির নাম অর্গানন (Organon)। তিনি সত্য আবিষ্কারের হাতিয়ার হিসেবে 'যুক্তিবিদ্যা'- কে ব্যবহার করেন। এরিস্টটলই সর্বপ্রথম যুক্তিবিদ্যার পরিপূর্ণ রূপরেখা নির্দেশ করেছিলেন এবং একটি সুসংহত রূপ নিয়েছিলেন। এজন্য এরিস্টটলকে 'যুক্তিবিদ্যার জনক' বলা হয়। এরিস্টটলীয় যুক্তিবিদ্যা দীর্ঘ দু'হাজার বছরেরও বেশি কাল ধরে মানুষের চিন্তার উপর একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করেছে। যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে এরিস্টটল বলেন, “জ্ঞান পদ্ধতির নির্দেশ প্রদান করাই হলো যুক্তিবিদ্যার মূল কাজ।” তিনি যুক্তিবিদ্যাকে প্রকৃত জ্ঞান আহরণের গুরুত্বপূর্ণ বাহন বলে মনে করেন। যুক্তিবিদ্যা হলো প্রারম্ভিক বিজ্ঞান। যে কোনো বিশেষ জ্ঞানানুসন্ধানের পূর্বাবস্থা। এক অর্থে সকল বিজ্ঞানের বিজ্ঞান বলা চলে। বিজ্ঞান হিসেবে যুক্তিবিদ্যা পদার্থ, প্রাণী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সমগোত্রীয় নয়, তবে যে কোনো বিজ্ঞানের অপরিহার্য প্রস্তুতিমাত্র। উপযোগী বৈজ্ঞানিক গবেষণার উপায় হিসেবে যুক্তিবিদ্যা ভূমিকা পালন করে। এরিস্টটল বলেন, “যুক্তিবিদ্যার কাজ হলো চিন্তার আকার ও উপাত্তের এবং জ্ঞান আহরণের পদ্ধতির বিশ্লেষণ।" তাঁর মতে, “যুক্তিবিদ্যা হলো সার্বিক থেকে বিশেষে এবং কারণ থেকে কার্যে যাওয়ার প্রক্রিয়া।
কতকগুলো সত্য থেকে কী করে অন্য কতকগুলো সত্যকে নিঃসৃত করা যায়, চিন্তার নিষ্কাশন পদ্ধতি হিসেবে অবরোহ যুক্তিবিদ্যার সহানুমানে তিনি তা দেখানোর চেষ্টা করেছেন। অনেকে আরোহ যুক্তিবিদ্যাকে অবরোহের বিপরীত বলে মনে করেন। কিন্তু একটু গভীরভাবে দেখলেই বোঝা যায় যে, আরোহ অবরোধের বিরোধী নয় বরং অবরোহের প্রস্তুতিমাত্র। আরোহের মাধ্যমেই বিজ্ঞানের পূর্ব ধারণা কিংবা সহানুমানের হেতুবাক্যের সত্যসমূহকে জানা যায়। যেমন- আমরা বুদ্ধি থেকে জানতে পারি 'সা' তার যে কোনো 'অংশ' থেকে বড়। বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হলো সার্বিক থেকে বিশেষকে পাওয়া, কোনো বিষয়ের প্রমাণ দেওয়া। আর আরোহ পদ্ধতি নির্দিষ্ট কাজ সমাপ্ত করলেই কেবল বোঝা যায় বুদ্ধিতে সার্বিকের জ্ঞান সুপ্ত অবস্থায় থাকে।
কাজেই যুক্তিবিদ্যার মাধ্যমেই মানুষ 'সার্বিক', 'বিশেষ', 'সময়', 'অংশ', 'অবরোহ', 'আরোহ' সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতে সক্ষম হয়।
এরিস্টটল বলেন যে, ‘অবরোহ যুক্তিবিদ্যায় যুক্তি বা ন্যায়ের আশ্রয়বাক্যগুলোকে সত্য বলে ধরে নিয়ে এবং যুক্তির নীতিমালাকে যথাযথভাবে অনুসরণ করে যুক্তিবিন্যাস করা হয় বা সিদ্ধান্ত টানা হয়। অবরোহ যুক্তিবিদ্যার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো আকারগত সত্যতা লাভ করা, অর্থাৎ বস্তুগত সত্যতা নয়। অবরোহ যুক্তিবিদ্যা সার্বিক আশ্রয়বাক্যের উপর নির্ভর করে বিশেষ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। অবরোহ যুক্তিতে আশ্রয়বাক্যের তুলনায় সিদ্ধান্ত কখনো ব্যাপক হয় না। যেমন-
সকল মানুষ হয় মরণশীল
রহিম হয় একজন মানুষ
রহিম হয় মরণশীল।.
উপরের যুক্তিতে দেখা যায় আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্ত আকারগতভাবে সত্য কিন্তু বস্তুগতভাবে সত্য নয়।
অন্যদিকে যে যুক্তিবিদ্যায় আশ্রয়বাক্যগুলোর বাস্তবতা পরীক্ষা করে পাথিব বস্তু সম্পর্কে সঙ্গতিপূর্ণ সিদ্ধান্ত টানা হয়, তাকে আরোহ যুক্তিবিদ্যা বলে। আকারগত সত্যতা ও বস্তুগত সত্যতা লাভ উভয় হলো আরোহ যুক্তিবিদ্যার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আরোহ যুক্তিবিদ্যায় সর্বক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য থেকে ব্যাপক হয়। যেমন-
রহিম হয় মরণশীল
করিম হয় মরণশীল
অনিতা হয় মরণশীল
রণিতা হয় মরণশীল
সকল মানুষ হয় মরণশীল।
এরিস্টটল অবরোহ ও আরোহ উভয় যুক্তিবিদ্যারই ধারণা প্রদান করেন। অর্থাৎ যুক্তিবিদ্যার যাত্রা শুরু হয় এরিস্টটল থেকে। এরিস্টল হলেন যুক্তিবিদ্যার ভিত্তি। এরিস্টটলীয় যুক্তিবিদ্যায়ই আমরা যুক্তিবিদ্যার যৌক্তিক চিন্তার মূলসূত্র দেখতে পাই। এই মূলসূত্র হলো চারটি। যথা : অভেদ নিয়ম ( Law of Identity), বিরোধ নিয়ম (Law of Contradiction). নির্মধ্যম নিয়ম (Law of Excluded Middle), পর্যাপ্ত হেতু নিয়ম (Law of Sufficent Reason)। এই চারটি মৌলিক সূত্রের উপর ভিত্তি করেই যুক্তিবিদ্যার সকল বিষয় আলোচিত ও বিশ্লেষিত হয়। সেদিক থেকে নানা দিক বিবেচনা করেই এরিস্টটলকে যুক্তিবিদ্যার জনক বলা হয়।
যুক্তিবিদ্যা । প্রথম পত্র
জে. এস. মিল প্রদত্ত ধারণা
জে. এস. মিল ব্রিটিশ যুক্তিবিদ ও দার্শনিক। যুক্তিবিদ মিল যুক্তিবিদ্যাকে বিজ্ঞান ও কলা উভয়ই বলে অভিহিত করেছেন। মিলের মতে, যুক্তিবিদ্যা যেহেতু যথার্থ চিন্তা-পদ্ধতির নীতিমালার জ্ঞান দেয়, তাই নিঃসন্দেহে এটি একটি বিজ্ঞান। আবার যুক্তিবিদ্যা কীভাবে যুক্তি বা চিন্তা করলে সত্য জ্ঞান লাভ করা যায় বা ভ্রান্তির সম্ভাবনা থাকে না, তার শিক্ষা দেয় বলে একে কলাবিদ্যা বলা যায়। মিলের মতে, যুক্তিবিদ্যা যেহেতু নীতিমালা নির্ণয় এবং ঐ নীতিমালার নিরীখে কোনো যুক্তির বৈধমান নির্ণয় করে তাই একে একদিকে বিজ্ঞান এবং অন্যদিকে কলাবিদ্যা বলা যায়। মিল বলেন, “যুক্তিবিদ্যা হলো এমন একটি বিজ্ঞান যা বিচার বা প্রমাণের মাধ্যমে জ্ঞাত সত্য থেকে অজ্ঞাত সত্যে উপনীত হওয়ার জন্য মনন ক্রিয়া সম্পর্কে এবং সহায়ক মানসিক প্রক্রিয়াসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করে।” মিল যুক্তিবিদ্যার সকল বৈশিষ্ট্যকে এই সংজ্ঞার মধ্যে তুলে ধরেন। যুক্তিবিদ্যা হলো প্রত্যক্ষ বিচারের মূল্যায়ন। এ কথার মধ্য দিয়ে মিল যুক্তিবিদ্যার ব্যাবহারিক দিকের উপর ইঙ্গিত প্রদান করেন। মিলের সংজ্ঞার মধ্যে ফুটে ওঠে যুক্তিবিদ্যা আকারগত ও বস্তুগত সত্যতার দিক নিয়ে আলোচনা করে।
যুক্তিবিদ্যার গতানুগতিক বা প্রচলিত সংজ্ঞাগুলোর মধ্যে মিল প্রদত্ত সংজ্ঞাটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মিলের মতে, “যুক্তিবিদ্যা হলো বোধশক্তির যে ক্রিয়াবলি সাক্ষ্য বিচারের জন্য অপরিহার্য, তাদের বিজ্ঞান, এটি জানা সত্য থেকে অজানা সত্যে পৌঁছার পদ্ধতি এবং তার সহায়ক অন্যান্য চিন্তা-ক্রিয়াপরতার বিজ্ঞান। " অনেকে যুক্তিবিদ মিল প্রদত্ত এ সংজ্ঞাকে নিখুঁত বলে মনে করেন। মিলের এ সংজ্ঞা থেকে দেখা যায়, যুক্তিবিদ্যা হলো এমন বিজ্ঞান যা বোধশক্তির ক্রিয়াপরতা নিয়ে আলোচনা করে। যুক্তিবিদ্যা জানা সত্য থেকে অজানা সত্যে গমন করে বলে একে অনুমান বা যুক্তিপদ্ধতির বিজ্ঞান বলা হয়। বোধশক্তির ক্রিয়াপরতা হলো যৌক্তিক সংজ্ঞা (logical definition), যৌক্তিক বিভাগ (logical division), নামকরণ (naming), শ্রেণিকরণ (classification) এবং ব্যাখ্যাকরণ (explanation)। মিলের মতে, বোধশক্তি হলো এমন বিষয় যাকে বলা হয় সাক্ষ্য বিচারের অনুগত জ্ঞানক্রিয়া, অর্থাৎ সকল বোধশক্তির মূলে রয়েছে আরোহ (Induction) প্রক্রিয়া।
যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে মিল, এটি বোঝাতে চেয়েছেন যে, যুক্তিবিদ্যা হলো একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান ও কলা। এর প্রধান আলোচ্য বিষয় হলো অনুমান যা কোনো কিছুর আবিষ্কার ও প্রমাণের বিজ্ঞান হিসেবে কাজ করে। যুক্তিবিদ্যার মধ্যে সকল প্রায়োগিক ও ব্যাবহারিক দিক আছে বলে মিল প্রদত্ত সংজ্ঞাটি তুলনামূলক সন্তোষজনক ও গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা বলে অভিহিত।
1.J.S. Mill, System of Logic Book 111. |
যুক্তিবিদ্যা পরিচিতি
যোসেফ প্রদত্ত ধারণা
ভাববাদী যুক্তিবিদ H. W. B. Joseph যুক্তিবিদ্যাকে চিন্তার বিজ্ঞান (Science of thought) হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তাঁর মতে, ‘চিন্তার বিষয়’ ও ‘চিন্তার আকার'-কে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। এজন্য যুক্তিবিদ্যাকে চিন্তার আকারের মূল সূত্রাবলির বিজ্ঞান হিসেবে সংজ্ঞায়িত না করে চিন্তার বিজ্ঞান বলে সংজ্ঞায়িত করা সবচেয়ে সহজ। এটি করলে চিন্তার আকারও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে।
যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে যোসেফের মত হলো- “যুক্তিবিদ্যা হলো চিন্তার বিজ্ঞান" (Logic is the science of thought) সমকালীন যুক্তিবিদেরা যুক্তিবিদ্যাকে আকারগত বিজ্ঞান বলে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু যোসেফ এ মতের বিরোধিতা করে বলেন যুক্তিবিদ্যা আকারগত ও বস্তুগত উভয়ই। যোসেফের মতে, যাঁরা যুক্তিবিদ্যাকে একটি পূর্ণাঙ্গ আকারগত বিজ্ঞানের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে চান, তাঁরা 'আকার' কথাটিকে সঠিক অর্থে গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁর মতে, বস্তুগত অনেকগুলো বিষয়ের মধ্যে যা সাধারণ তা-ই হলো ঐ বিষয়গুলোর আকার। এ অর্থে শুধু যুক্তিবিদ্যাই নয়, প্রত্যেকটি বিজ্ঞানকেই আকারগত বলা যায়। যুক্তিবিদ্যা চিন্তার আকার নিয়ে আলোচনা করে ঠিকই, কিন্তু চিন্তার উপাদানকে বাদ দিয়ে নয়। কারণ চিন্তার মধ্যেই আকার ও উপাদান উভয়কেই পাওয়া যায়, যেমনটি পাওয়া যায় একটি মুদ্রার মধ্যে। যোসেফ একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টিকে পরিষ্কার করেছেন। যেমন— 'ক্ষুধা' ও 'তৃষ্ণা' এ দুটি মানুষের সহজাতবৃত্তি বস্তুগতভাবে ভিন্ন হলেও আকারগত দিক থেকে এরা এক ও অভিন্ন। বস্তুগতভাবে ভিন্ন এই কারণে যে, এদের একটি খাদ্যের আকাঙ্ক্ষা এবং অন্যটি পিপাসার আকাঙ্ক্ষা নির্দেশ করে। আকারগত দিক থেকে 'খাদ্য' ও 'পিপাসার' পার্থক্য এদের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করে না। কারণ খাদ্যের আকাঙ্ক্ষা হিসেবে পিপাসার মধ্যেও একই বিশিষ্টতা লক্ষণীয়।” সুতরাং যুক্তিবিদ্যা আকারগত ও বস্তুগত উভয়ই।
যোসেফের মতে, যাঁরা যুক্তিবিদ্যাকে পুরোপুরি আকারগত বিজ্ঞান ও চিন্তার আকারের নিয়মাবলির বিজ্ঞান বলে অভিহিত করতে চান, তাঁদের ভুল হলো এখানেই যে, তাঁরা বিষয়াবলির চিন্তাসমূহের মধ্যে প্রকাশিত নয়, এমন আকারের আলোচনাকে যুক্তিবিদ্যার বিষয়-বহির্ভূত বলে মনে করেন। তাঁদের ধারণা যে বিষয়াবলিকে কেন্দ্র করে চিন্তার উদ্ভব হয়, সেগুলোকে নির্দেশ না করেই চিন্তার আকারকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে চিন্তার মূলসূত্রকে আবিষ্কার করা যায়। কিন্তু এ ধারণা, ঠিক নয়। কারণ যখনই আমরা কোনো চিন্তার সূত্রাবলি আবিষ্কার করতে যাই তখন আমাদের বিভিন্ন বিষয় থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন চিন্তন-ক্রিয়ার বিশিষ্টতার দিকে লক্ষ রাখতে হয়। যেমন— বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন বিশিষ্টতা সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলে আমরা প্রাণীর আকারকে সঠিকভাবে বুঝতে পারি না, চিন্তার নিয়মাবলি সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকলেও তেমনি আমরা চিন্তার আকারকে সঠিকভাবে বুঝতে পারি না। তাই যুক্তিবিদ্যাকে কেবল আকারগত বিজ্ঞান না বলে আকারগত ও বস্তুগত উভয়ই বলা বেশি যুক্তিযুক্ত। যুক্তিবিদ্যা 'বিজ্ঞান' না কি ‘কলা' এ সিদ্ধান্তে যোসেফ যুক্তিবিদ্যাকে তাঁর আলোচনায় বিজ্ঞান বলে অভিহিত করেছেন। তিনি মনে করেন যুক্তিবিদ্যা হলো এমন একটি বিজ্ঞান যা চিনক্রিয়ার সাধারণ ও সার্বিক নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করে। দৈনন্দিন জীবনে আমরা যেসব নীতিমালা নিয়ে চিন্তা করি, যুক্তিবিদ্যা তার বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা করে। অনেকেই মনে করতে পারে যুক্তিবিদ্যা চিন্তার নীতিমালা পায় কোথা থেকে। এ প্রসঙ্গে যোসেফ বলেন, বিশেষ বস্তুর চিন্তার মধ্যেই যুক্তিবিদ্যা তার চিন্তার নীতিমালা পায়। কোনো বিষয় সম্পর্কিত চিন্তা পাওয়া যায় বিভিন্ন বিজ্ঞানের মধ্যে। যেমন— গ্রহ-নক্ষত্র সম্পর্কিত চিন্তা পাওয়া যায় জ্যোতির্বিজ্ঞানে, উদ্ভিদ সম্পর্কিত চিন্তা পাওয়া যায় উদ্ভিদবিজ্ঞানে, প্রাণী সম্পর্কিত চিন্তা পাওয়া যায় প্রাণিবিজ্ঞানে ইত্যাদি। এসব বিজ্ঞানের মধ্যেই যুক্তিবিদ চিন্তার সার্থক নীতিমালা খুঁজে পায়। এজন্য বলা হয়, “যুক্তিবিদ্যা হলো সকল বিজ্ঞানের সেরা বিজ্ঞান।" যুক্তিবিদ্যাকে যাঁরা কলা বলে অভিহিত করেছেন, আসলে কোনো অর্থেই যুক্তিবিদ্যাকে কলা বলে অভিহিত করা যায় না। কারণ কলাবিদ্যা সম্পর্কে এরিস্টটল যা বলেছেন, তাতে যুক্তিবিদ্যাকে অন্তত কলাবিদ্যা বলা যায় না। এরিস্টটলের মতে, কলাবিদ্যা বস্তুর মধ্যে পরিবর্তন ঘটায়। একজন শিল্পী তাঁর আপন সত্তা থেকে পৃথক কোনো বস্তুর মধ্যে পরিবর্তন সূচনা করেন। যেমন- শিল্পী যখন মূর্তি তৈরি করেন তখন তিনি মাটির নিজস্ব সত্তাকে পরিবর্তন করেই এ কাজ সম্পন্ন করেন। যুক্তিবিদ্যা কোনো বিষয় সম্পর্কিত চিন্তার পরিবর্তন সাধনের জন্য কাজ করে না। যুক্তিবিদ্যার কাজ হচ্ছে বিজ্ঞানসম্মত চিন্তা বা যুক্তির স্বরূপ আলোচনা করা। তবে যুক্তিবিদ্যা কাউকে যুক্তিবিদ হতে শিক্ষা দেয় না। যুক্তিবিদ্যার কাজ হলো একটি আদর্শের আলোকে বৈধ-অবৈধ যুক্তির স্বরুপ নির্ণয় করা। যে আদর্শের আলোকে যুক্তিবিদ্যা বৈধ ও অবৈধ ন্যায়ের মূল্যায়ন করে, সেই আদর্শের প্রেক্ষিতে যুক্তিবিদ্যাকে আদর্শনিষ্ঠ বিদ্যা হিসেবে অভিহিত করা যায়, কিন্তু কলাবিদ্যা হিসেবে অভিহিত করা যায় না।
- H. WB. Joseph, An Introduction to Lagic, London, 1967P..
- HW B. Joseph, Jhid P9 - 11
যুক্তিবিদ্যা প্রথম পত্র
আই. এম. কপি প্রদত্ত ধারণা
আধুনিক প্রতীকী যুক্তিবিদ আই.এম. কপি প্রচলিত বা গতানুগতিক যুক্তিবিদদের সমালোচনা করেন। তিনি যুক্তিবিদ্যাকে ব্যাবহারিক দিকের উপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। কপির মতে, যুক্তিবিদ্যার প্রধান উদ্দেশ্য হলো বৈধ যুক্তি ও অবৈধ যুক্তির মধ্যে পার্থক্য করা এবং বৈধ যুক্তি থেকে অবৈধ যুক্তিকে পৃথক বা আলাদা করা। যুক্তিবিদ্যার মাধ্যমে আমরা যুক্তির বৈধ মান নির্ণয়ের রীতিনীতি সম্পর্কে জানতে পারি। যুক্তিবিদ্যা হলো এমন বিষয় যা বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের উপর গুরুত্ব আরোপ করে। যাঁরা যুক্তিবিদ্যা পাঠ করবে তাঁরা বৈধভাবে যৌক্তিক নীতি অনুসরণ করে যুক্তির উপস্থাপনা করতে পারবে। যুক্তি পদ্ধতির সাধারণ নীতিগুলো যদি কারো জানা থাকে, তাহলে অতি সহজেই তিনি বৈধ ও বৈধ যুক্তির পার্থক্য করতে পারবেন। এজন্য কপি যুক্তিবিদ্যাকে বৈধ ন্যায় (Valid argument) থেকে অবৈধ ন্যায়ের পার্থক্য নির্দেশ করার জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতি ও নীতিসমূহের একটি বিশিষ্ট বিদ্যা বলে আখ্যায়িত করেছেন।
কপি প্রদত্ত যুক্তিবিদ্যার সংজ্ঞা থেকে দেখা যায় যে, তিনি যুক্তিবিদ্যার ব্যাবহারিক দিকের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। যুক্তিবিদ্যার মূল উদ্দেশ্য হলো বৈধ ন্যায় বা যুক্তি থেকে অবৈধ ন্যায় বা যুক্তির মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করা। যুক্তিবিদ্যার সার্থক অনুশীলন করে যুক্তির বৈধতার রীতিনীতি সম্পর্কে জানতে পারি। আশ্রয় বাক্যের উপর ভিত্তি করে আমরা যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি যুক্তিবিদ্যা তার মূল্যায়ন করে। এজন্য কপি বলেন, “যুক্তিবিদ্যা হলো ফলিত কলা।" ফলিত কলা যেমন মানুষের মনকে আকর্ষণ করে, বুদ্ধিবৃত্তিকে নাড়া দেয় ও তাড়িত করে, তেমনি যুক্তিবিদ্যার আদর্শ ও যুক্তি কৌশলের নান্দনিক দিক ও নিপুণতা মানুষের মনকে স্পর্শ করে এবং ছুঁয়ে যায়।
আধুনিক যুক্তিবিদ টমসন যুক্তিবিদ্যাকে চিনের বিজ্ঞান বলে অভিহিত করলে কপি তাঁর সংজ্ঞার ঘোর বিরোধিতা করেন। কপির মতে, 'চিন্তন' হলো মনোবিজ্ঞানের বিষয়। চিভনের সকল প্রকার পদ্ধতির চর্চা করা একমাত্র মনোবিজ্ঞানের কাজ। কাজেই যুক্তিবিদ্যাকে চিন্তনের বিজ্ঞান বলে অভিহিত করলে স্মৃতি, কল্পনা, অনুভূতি সবক্ষেত্রেই চিন্তা শব্দটি প্রযোজ্য হয়ে পড়ে। কিন্তু যুক্তিবিদ্যা চিন্তার এসব আকার নিয়ে আলোচনা করে না।
কপির মতে, যুক্তিবিদ্যা হলো এমন বিষয় যা কেবল সবিচার যুক্তিপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করে।
একক কাজঃ শ্রেণিকক্ষে এককভাবে যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে বিভিন্ন যুক্তিবিদের প্রদত্ত ধারণা দিয়ে একটি তালিকা তৈরি কর। |